বিশ্বব্যাপী শক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এই চাহিদা মেটাতে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা এখনও অনেক বেশি। তবে, জীবাশ্ম জ্বালানির সীমিত মজুদ এবং কার্বন নিঃসরণের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে নবায়নযোগ্য শক্তি (Renewable Energy) ও শিল্পখাতের টেকসই উন্নয়ন এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, জিওথার্মাল এবং বায়োমাস শক্তি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এই প্রযুক্তিগুলোর সম্প্রসারণ কেবল পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করছে না, বরং শিল্প খাতেও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
নবায়নযোগ্য শক্তি কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
নবায়নযোগ্য শক্তি হল প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত শক্তি যা পুনরায় পূরণযোগ্য এবং টেকসই। এটি মূলত পাঁচটি প্রধান উৎস থেকে আসে:
- সৌরশক্তি (Solar Energy) – সূর্যের আলোকে বিদ্যুতে রূপান্তর করা হয়।
- বায়ুশক্তি (Wind Energy) – বায়ুর গতিবেগ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
- জলবিদ্যুৎ (Hydropower) – পানির প্রবাহ ব্যবহার করে টারবাইন চালানো হয়।
- জিওথার্মাল শক্তি (Geothermal Energy) – ভূগর্ভস্থ তাপ ব্যবহার করা হয়।
- বায়োমাস শক্তি (Biomass Energy) – উদ্ভিদ ও প্রাণীজাত বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন করা হয়।
এই শক্তিগুলোর ব্যবহার জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেয়, যা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
নবায়নযোগ্য শক্তির বর্তমান বৈশ্বিক প্রবণতা
বর্তমানে, বিশ্বের বহু দেশ নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে নীতিগত পরিবর্তন এনেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৫০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে নবায়নযোগ্য শক্তির উপর নির্ভরশীল হতে চায়। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ভারতও এই খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন বিশ্বব্যাপী ১০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তির অবদান সর্বাধিক।
নবায়নযোগ্য শক্তির শিল্পখাতে প্রভাব
নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারের ফলে শিল্পখাতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। বড় বড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখন গ্রিন এনার্জির দিকে ঝুঁকছে।
- ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা ও রিভিয়ান সম্পূর্ণ নবায়নযোগ্য শক্তির উপর ভিত্তি করে তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালনা করছে।
- অ্যাপল, গুগল, এবং মাইক্রোসফট তাদের ডাটা সেন্টার পরিচালনার জন্য ১০০% নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছে।
- সৌর ও বায়ুশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এই খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
নবায়নযোগ্য শক্তির চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
যদিও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবুও কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
- উৎপাদন খরচ – প্রাথমিক বিনিয়োগ ব্যয় তুলনামূলক বেশি।
- সংগ্রহ ও সংরক্ষণ – সৌর ও বায়ুশক্তি নির্ভরশীলতা নির্দিষ্ট আবহাওয়ার উপর।
- পরিকাঠামো উন্নয়ন – বিদ্যমান গ্রিড সিস্টেম নবায়নযোগ্য শক্তির সাথে খাপ খাওয়াতে সময় লাগছে।
তবে, টেকসই নীতিমালা, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশেও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ৪০% বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
- গ্রামীণ অঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
- সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ায় বায়ুশক্তি ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গতি পাচ্ছে।
- নবায়নযোগ্য শক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তি পরিকল্পনা
উপসংহার: নবায়নযোগ্য শক্তির টেকসই ভবিষ্যৎ
নবায়ননবায়নযোগ্য শক্তিযোগ্য শক্তি শুধু পরিবেশ সংরক্ষণই করছে না, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। সরকার, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার আরও প্রসারিত হবে।
বিশ্বের প্রতিটি দেশ যদি টেকসই শক্তির দিকে মনোনিবেশ করে, তবে ভবিষ্যতে আমরা এক কার্বন-নিরপেক্ষ এবং টেকসই পৃথিবী গড়ে তুলতে সক্ষম হব। এখনই সময় নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর এবং একটি পরিবেশবান্ধব পৃথিবী গড়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার!
*Capturing unauthorized images is prohibited*